রমজানে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক কয়েকটি ঘটনা .........

রমজানের ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক কিছু ঘটনা
সিরাজের মসজিদে ওয়াকিল। ছবি: ইরনা

মহিমান্বিত রমজান শুধু পানাহার থেকে মুক্ত থাকার মাস নয়। নয় শুধু ইবাদত বন্দেগিতে কাটিয়ে দেয়ার কোনো উৎসব। বরং পুরো রমজানের রয়েছে ঐতিহাসিক এক মূল্যায়ন। 

পৃথিবীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষণীয় ঘটনা ঘটেছে এই মহিমান্বিত মাস রমজানে। তাই রোজা ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি রমজানের রয়েছে ভিন্নরকমের তাৎপর্য। 

রমজানের শেষ দশকে রয়েছে পবিত্রতম এক রাত। যা হাজার রাতের চেয়েও কল্যাণময় ও শ্রেষ্ঠ।  যে রাতে মানবতার মুক্তির দিশারি, প্রভূত সফলতা ও জান্নাতের চাবিকাঠি সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব কোরআনকে প্রথম আসমান থেকে পৃথিবীর বুকে নাজিল করা হয়েছে। 

আল্লাহতায়ালা কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় এ কথা নিজেই জানিয়েছেন। 

তিনি বলেন, রমজান এমন এক মাস, যাতে কোরআন অবতীর্ণ  করা হয়েছে; মানুষের জন্য পথপ্রদর্শকরূপে ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনা ও সত্যাসত্যের পার্থক্য নির্ণয়কারী হিসেবে।  (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)

এক বর্ণনা অনুযায়ী মিরাজের ঘটনা এই রমজানেই সংঘটিত হয়েছে।  যদিও বর্ণনাটি নিয়ে বিভিন্ন কথা রয়েছে।  

ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ

৬২৪ খ্রিস্টাব্দে তথা দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজানে বদর প্রান্তরে সংঘটিত হয়েছিল মুসলিম ও কাফিরদের মধ্যকার  ঐতিহাসিক এক যুদ্ধ। যাতে মুসলমানদের সর্বসাকুল্যে সৈন্য সংখ্যা ছিল মাত্র ৩১৩ জন। তাও তারা ছিলেন নিরস্ত্র। 

গাছের ডালপালা ছাড়া তাদের কোনো হাতিয়ার ছিল না।  ছিল না কোনো লৌহবর্ম বা শিরস্ত্রান। তবুও কুফরি শক্তিকে মুসলমানরা পরাজিত করেছিল। মূলত ওই যুদ্ধে তিন থেকে পাঁচ হাজার আসমানী ফেরেশতা প্রেরণ করে আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের সরাসরি সাহায্য করেছিলেন। 

আবু জাহেল, উতবা, শায়বাসহ মোট ৭০ জন কাফির নিহত হয় এই যুদ্ধে। আরো ৭০ জন কাফির মুসলমানদের হাতে বন্দি হয়। অন্যদিকে ১৪ জন মুসলিম মুজাহিদ বীরবিক্রমে লড়াই করে শাহাদাতের গৌরব অর্জন করেন।

মক্কা বিজয়

অষ্টম হিজরির ২০ বা ২১ রমজান শুক্রবার নবীজি (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম মক্কা বিজয় করেন। তখন কাবাঘর মুশরিকদের ৩৬০টি মুর্তি দিয়ে ভরা ছিল। মুসলমানরা সেগুলো অপসারণ করে আল্লাহতায়ালার ঘরকে পবিত্র করেন। 


নাখলা নামক জায়গার মূর্তি অপসারণ

নবীজি (সা.) অষ্টম হিজরির ২৫ রমজান হজরত খালেদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.)-এর নেতৃত্বে একদল সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন নাখলা নামক জায়গার একটি বৃহদাকার মূর্তি অপসারণের জন্য, কাফিররা এর পূজা করত, যার নাম ছিল উজ্জা। 
হজরত খালেদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) নিজ হাতে ওই মূর্তি অপসারণ করেন। এরপর তিনি বলেন, আর কখনো এখানে উজ্জার উপাসনা হবে না। (আলবিদায়াহ ওয়াননিহায়াহ : ৪/৩১৬)

তায়েফে লাত নামক মূর্তি অপসারণ

নবম হিজরির রমজান মাসে তায়েফের সাকিফ গোত্র স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং তারা নিজেরাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেদের উপাস্য ‘লাত’ নামক মূর্তি অপসারণ করে। (আলবিদায়াহ ওয়াননিহায়াহ : ৫/৩১৬)

ঐতিহাসিক তাবুক যুদ্ধ

নবম হিজরির রজব মাসে তাবুক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কিন্তু তাবুক যুদ্ধের কিছু ঘটনা সংঘটিত হয় নবম হিজরির রমজান মাসে। (আলফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু: ৩/১৬২৭)

এছাড়া হিজরতের দুই বছর পূর্বে রমজান মাসে উম্মুল মো’মিনীন হজরত খাদিজা (রা.) এবং নবীজি (সা.) এর মেয়ে হজরত রুকাইয়া (রা.) ইন্তেকাল করেন। 

হজরত হাসান ইবনে আলী (রা.) তৃতীয় হিজরির রমজান মাসে জন্ম গ্রহণ করেন এবং চতুর্থ হিজরিতে নবীজি (সা.) হজরত যায়নাব বিনতে খুযাইমা (রা.) কে বিয়ে করেন। 

১১ হিজরির রমজানে নবীজি (সা.) সবচেয়ে আদরের মেয়ে, জান্নাতী নারীদের সরদারনী, হজরত ফাতিমা (রা.) এবং ৪০ হিজরিতে শেরে খোদা হযরত আলী (রা.) ইন্তেকাল করেন।

Unique Code wait
Unique Code wait
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url